শামসুল আলম স্বপন,কুষ্টিয়া :
স্বৈরাচারের পতনের পর কুষ্টিয়ার ৪টি আসন পুনরুদ্ধারে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসনকে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান নিজের আসন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ।
কিন্তু আওয়ামী শাসনামলে ভোট কাটার রাজনীতির কারণে ৩টি আসন আওয়ামীলীগ ও ১টি আসন আওয়ামীলীগের দোসর জাসদ দখলে নেয়। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার ৪টি আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি । এ ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লক্ষ,৪৩ হাজার,৯০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লক্ষ, ২২ হাজার, ৫১৬ জন আর নারী ভোটার হলো ৮ লক্ষ,২১ হাজার, ৩৮৮ জন । জেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৫৭৮টি ।
কুষ্টিয়া-০১ আসন:
ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর। ১টি উপজেলা নিয়েই কুষ্টিয়া-১ আসন। এ আসনে মোট ভোট সংখ্যা ৩ লক্ষ,৭৯ হাজার,১৮৬ জন। মোট কেন্দ্র ১২৯টি। বিগত স্বৈরাচারের শাসনামলে বিএনপি’র নেতা কর্মীরা বাড়িতে ঘুমোতে পারেন্ ি। মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা কেউ জেলে কেউবা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন। স্বৈরাচার পতনের পর বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা বাড়ি ফিরে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। এ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামীলীগের প্রার্থী না থাকায় বিএনপি’র পোয়াবারো । এ আসনে বিএনপিই বিএনপি’র প্রতিদ্ব›িদ্ব । নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন সাবেক এমপি ও বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা । বিএনপি নেতা এ্যাড. রমজান আলী, আলহাজ¦ আলতাফ হোসেন, শহীদ সরকার মঙ্গল, নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা, শরীফ উদ্দিন জুয়েল । তবে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনা বেশী বলে দেলীয় নেতা-কর্মীদের অভিমত।
এ আসনে উপজেলা জামায়াতের আমির উপাধক্ষ্য বেলাল উদ্দিন জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীই হবেন বিএনপি প্রার্থীর মূল প্রতিদ্ব›িদ্ব এমনটি বলছেন ভোটাররা। বিএনপি নেতা রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন আমি মাঠ গুছাচ্ছি । দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অতীতের মত বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো।
কুষ্টিয়া-০২ আসন :
মিরপুর ও ভেড়ামারা ২টি উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া -২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লক্ষ,৪৮ হাজার,৫৬২ জন। ভোট কেন্দ্র ১৬১টি । দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ডামি প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে হেরে যান জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ আসনের মিরপুর উপজেলা ছিল এককালে চরমপন্থীদের অভয়ারন্য । মিরপুর উপজেলায় যে প্রার্থী বেশী ভোট পান তিন্ইি মুলত নির্বাচিত হন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ব্যারিষ্টার রাগিব রউফ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)এর নেতা আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপি নেত্রী ফরিদা পারভীন । তবে ভোটারদের অভিমত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক শহীদুল ইসলামকে মনোনয়ন না দিলে এ আসন হারাবে বিএনপি । এখানে ধানের শীষ প্রতীক ফ্যাক্টর নয়, ব্যক্তি ফ্যাক্টর। সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ২টি উপজেলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় । তিনি নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুতের জন্য ২টি উপজেলায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা রয়েছে তাঁর সাথে। সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আগের মতই আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো।
এ আসনে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামের শক্তিশালী প্রার্থী জামায়াত নেতা আলহাজ¦ আব্দুল গফুর । তিনি ভোটের জন্য ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের ধারনা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলে জামায়াত প্রার্থী আব্দুল গফুরই হবেন এমপি এমনটি বলছে এলাকাবাসী। জামায়াত নেতা আলহাজ¦ আব্দুল গফুর বলেন নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার তা আমরা নিয়েছি। তিনি জানান বিএনপি প্রার্থীই হবে তার মূল প্রতিদ্ব›িদ্ব। এ আসনে এনসিপি’র কোন প্রার্থীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া-০৩ আসন:
কুষ্টিয়া সদর ও ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় এ ২টি থানা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-৩ আসন। এ আসনে ভোট সংখ্যা ৪,লক্ষ, ১৩,হাজার,৩৪৭ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৪০টি। কুষ্টিয়া-৩ আসন বিএনপি’র ঘাটি হলেও বিগত স্বৈরাচারের আমলে দখলে নেয় আওয়ামীলীগ। এ আসনে বির্তকিত নির্বাচনে পর পর তিনবার নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আওয়ামীলীগের সময় কোন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ব কোন প্রার্থীকে মাঠে নামতে দেয়া হয়নি। আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোটার বিহীন নির্বাচনে মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি ঘোষিত হয়েছিলেন বার বার। এ আসনে বিএনপি থেকে এবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক এমপি ক্লিন ইমেজের নেতা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। তৃণমুলের নেতা-কর্মীরা রয়েছে তার সাথে। তিনি বলেন দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অতীতের চেয়েও বেশী ভোটে নির্বাচিত হব। এ আসনে বিএনপি থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র আহŸায়ক এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা কুতুব উদ্দিন আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার ও বিএনপির আলোচিত জনপ্রিয় তরুন নেতা কাজল মাজমাদার।
তবে এ আসনে ইসলামী স্কলার মুফতি আলহাজ¦ আমির হামজাকে জামায়াতে ইসলাম থেকে মনোনয়ন ঘোষণা করায় চিন্তার ভাজ পড়েছে বিএনপির নেতাদের কপালে। এ আসনে এ দুটি দলের প্রার্থীরা গণ-সংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটারদের মাঝে কাজ করছে সংশয়। তাদের ধারণা দল প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ভুল করলে এ আসনে বিএনপিকে মাসুল দিতে হবে। তবে তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে দল এমপি পাবে। অন্যথায় জামায়াত এ আসন নিবে দখলে। এ আসনে এনসিপি থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা কেউ বলতে পারেনি। ।
কুষ্টিয়া-০৪ আসন :
কুমারখালী ও খোকসা ২টি উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-৪ আসন। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ,৩৫ হাজার,৫০২ জন। এ আসন এক সময় ছিল আওয়ামীলীগের ঘাটি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন এ্যাড. সৈয়দ মাসউদ রুমী। তাঁর সততা ও উন্নয়ন দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার কারণে আওয়ামীলীগের ঘাটি পরিনত হয় বিএনপি’র ঘাটিতে। পরবর্তীতে এ্যাড. সৈয়দ মাসউদ রুমীর পুত্র সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী এ আসনে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। পরাজিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী । এরপর স্বৈরাচারের শাসনামলে এ আসনটি পুনরায় চলে যায় আওয়ামীগের দখলে । এবার ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী । সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী তার মধ্যে অন্যতম। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হবেন শতভাগ নিশ্চিত নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন সাবেক পিপি,বিএনপি নেতা এ্যাড. গোলাম মোহাম্মদ, নূরুল ইসলাম আনছার প্রামানিক ও শেখ সাদী ।
এ আসনে জামায়াতে ইসলাম থেকে মনোনয়ন পেতে পাবেন উপজেলা জামতের আমির আবজাল হুসাইন। তিনি মাঠ পর্যায়ে গণ-সংযোগ চালাচ্ছেন। এনসিপি থেকে কে মনোনয়ন পাবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচনী মাঠ জরিপে দেখা যায় কুষ্টিয়ার ৪টি আসনেই বিএনপি’র সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে জামায়াতে ইসলামের প্রার্থীর।
সুত্র: দৈনিক আমাদের সময় : ২৬/৭/২৫ :