: শামসুল আলম স্বপন :
আগামী ২৬ মে-২০২৫ মিরপুর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। ১৩ ইউনিয়নের ৯২৩ জন ভোটার নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে । খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ভোটাররা খুঁজছেন ক্লিন ইমেজের নেতাদের। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক হতে হবে দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী । যাদের বিরুদ্ধের কর্মীদের তেমন কোন অভিযোগ নেই। বরং দল ও কর্মীদের প্রতি যে সব নেতাদের রয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালো বাসা, যারা বিগত দিনে বিপদে -আপদে দাঁড়িয়েছে কর্মীদের পাশে। তেমন নেতাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন তৃমমূল কর্মীরা।
এ ক্ষেত্রে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও পোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার ওমর ফারুখ কুদ্দুসকে মিরপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক জননন্দিত চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার টিপু সুলতানকে সাধারন সম্পাদক হিসেবে পেতে চায় মিরপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ।
পাশাপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা অপকর্মের হোতা কথিত দরবেশ বাবার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিএনপি’র নেতা-কর্মী ও মিরপুরবাসী । ২৬ মে দরবেশ বাবার পতন অনিবার্য এমনটি বলছেন তারা ।
যে সব কারণে পতন হবে দরবেশ বাবার !
১। আওয়ামীলীগকে পুণর্বাসন করা,চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, জমিদখল, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দরবেশবাবা খ্যাত নেতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জনগণ। দরবেশ বাবার দখলবাজী চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে মিরপুরবাসী। কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলা বিএনপি নেতা দরবেশ বাবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে বিএনপি'র ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমন জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে চরম ক্ষোভ। এলাকাবাসী বিএনপির প্রতি হারিয়ে ফেলছে আস্থা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সংগঠনটির নেতারা দলীয় সমর্থনের পাল্লা ভারী করতে ব্যস্ত হয়েছে উঠেছে।
২। দরবেশ বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটিসহ মিরপুরের সর্বস্তরের জনগণ মিরপুর উপজেলার সামনে মানব বন্ধন করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান । এরপরও থেমে থাকেনি দরবেশ বাবার জঘন্য অপকর্ম ।
৩। মিরপুর হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে হাসপাতাল টাকে পারিবারিক হাসপাতালে পরিণত করেছে রব্বান । হাসপাতালে আসা রোগীদের যাবতীয় টেষ্ট দরবেশ বাবার ক্লিনিকে করাতে বাধ্য করেন । ভুক্তভোগী রোগীরা জানান দরবেশ বাবা মিরপুর হাসপাতালের খাবার সরবরাহ করে থাকেন যার মান খুবই নিম্ন । টেন্ডারের মাধ্যমে যে ঔষধ ¯øাপ¬াই দেয়ার কথা তা দেয়া হয় না। মিরপুর হাসপাতালে বাচ্চা প্রসব করতে আসা রোগীনিদের তিনি চিকিৎসকদের সাথে দফারফা করে তার ক্লিনিকে সিজার করাতে বাধ্য করেন।
৪। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সম্প্রতি দরবেশ বাবা বিভিন্ন প্রোগ্রামের খরচের কথা বলে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন। এছাড়াও ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
৫। দরবেশ বাবার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হলো পতিত সরকারের সাবেক এমপি কামারুল আরেফিনের প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ নিজে দেখভাল করছেন । কামারুল আরেফিনের অনুগত ঠিকাদার এখন দরবেশ বাবার ঠিকাদারী পার্টনার। উপজেলার মধ্যে কোন ঠিকাদারের কাজ লটারীতে বাধলে দরবেশ বাবা হুমকি ধামকি দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে । আর দরবেশ বাবা যে কাজ গুলো করছে তার কোন জবাবদিহিতা নেই। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আওয়ীমীপন্থী ঠিকাদারদের কাজ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির অযুহাতে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা করছেন তিনি । ঘগনিষ্ঠজনরা জানান ৫ই আগষ্টের আগে তার কোন প্রাইভেট গাড়ী ছিল না। বর্তমানে তিনি একটি কার ও একটি জিপ গাড়ীর মালিক।
৬। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, গত ১ ফেব্রæয়ারি মিরপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারে অবস্থিত জাসদ কর্মী জালাল উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি দোকানঘর জোর করে দখল করে নিয়ে পৌর বিএনপি'র কার্যালয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় দরবেশ বাবা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি তাৎক্ষণিক দরবেশ বাবা কে সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাইনবোর্ড যথাস্থানে রেখে দখলবাজি আরো পাকাপোক্ত করে নেন দরবেশ বাবা । পরে নেতাদের চাপে পড়ে তিনি ওই সাইন বোর্ড রাতের আধাঁরে নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হন ।
৭। এ দিকে চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত দরবেশ বাবা সড়ক ও জনপথের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তিনটি দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর টাকার নেশায় পাগল হয়ে বিতর্কিত বিএনপি নেতা দরবেশ বাবা ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তিনি মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সামনে অবস্থিত শাহাদালী ক্লিনিক ও ফার্মেসীর কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে দরবেশ বাবা তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে লুটপাট করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয় তাতে ওই ক্লিনিকের মালিকের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
৮। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরপরই স্বৈরাচারের আমলে মিরপুরের আওয়ামীলীগ সমর্থিত বিএনপিসহ জনগনের উপর চরম অত্যাচার করা জোয়ার্দার পরিবার ছিল চরম আতংকে। ওই সময় টাকার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বিএনপি নেতা দরবেশ বাবা । তিনি জোয়াার্দার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তাব পাঠায় তাদের কাছে। জনশ্রতি আছে প্রায় কোটি টাকা চাঁদার বিনিময়ে গত ১৬ বছর স্বৈরাচারের আমলে মিরপুরবাসীর উপর অত্যাচার করা আওয়ামীলীগ পরিবারটির জান মাল রক্ষার দায়িত্ব নেন দরবেশ বাবা । যার ফলে সেই জেয়ার্দ্দার পরিবারে সদস্যারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা দরবেশ বাবা আর্শীবাদে স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসাবাণিজ্য ।
৯। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করেন। তার নির্বাচনে দরবেশ বাবা ও তার পরিবারের লোকজন সমন্বয়কারী হিসেবে ট্র্যাক প্রতিকের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনী কর্মকান্ড চালিয়ে যান। এরপর পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এডভোকেট আব্দুল হালিম এর নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক হিসাবে বিএনপি নেতা দরবেশ বাবা কাজ করেন, এতে ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল বিএনপি'র নেতাকর্মীরা। মিরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল হক চেয়াম্যান জানান, ভারতে অবস্থানরত কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফাটাকেষ্ট খ্যাত কামারুল আরেফিনের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে দরবেশ বাবা সারাক্ষণ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন এবং তার মতামতের উপর ভিত্তি করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে বিএনপি'র ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ ও জাসদের বেশ কিছু নেতাকর্মীদের বিএনপি'র কমিটিতে রেখেছেন। এতে করে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১০। দরবেশ বাবা মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে পারিপারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। হাসপাতালের সকল টেষ্ট বাধ্যতামূলক নিজের ক্লিনিকে করার জন্য রোগীদের চাপ সৃষ্টি করারও বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বহু অপকর্মের হোতা দরবেশ বাবা ও তার পরিবারের লোকজনের দৌরাত্বের লাগাম টানতে না পারলে আগামীতে দলের অনেক বড় মাপের খেসারত দেওয়া লাগতে পারে বলে রাজনৈতিক সমালোচকরা মনে করছেন। এ সব কারণে মিরপুরের জনগন ও বিএনপির নেতা কর্মীরা চাচ্ছেন ২৬ মের নির্বাচনে দরবেশ বাবার ভরাডুবি।
১১। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে দরবেশ বাবা পতন নিশ্চিত জেনে অবৈধ ভাবে আয় করা টাকা দিয়ে ভোট কেনার পায়তারা করছেন। তবে অনেক ভোটার বলছেন টাকা দিয়েও ভোট কিনতে পারছেন না দরবেশবাবা ।