: শামসুল আলম স্বপন :
১৯৭৯ সাল । তখন আমি কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছড়া – কবিতা লিখতাম শ্রদ্ধেয় আবদুর রশীদ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক জাগরণী পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ “মৌচাক”-এ । মোজাফ্ফর ভাই তখন ওই পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। আমার লেখা ৩টি ছড়া মৌচাকে প্রকাশিত হওয়ার পর লেখা-লেখির প্রতি অনেকটা ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় আসবো সেটা ভাবিনি কোন দিন। হঠাৎ খবর পেলাম কম্যুনিষ্ট নেতা কমরেড খোয়াজ উদ্দিন জেল থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সাথী খোয়াজের এই সংবাদটি প্রকাশ করা দরকার। কিন্তু সংবাদ কি ভাবে লিখতে হয় জানিনা তা ।
মনের টানেই লিখে ফেল্লাম খোয়াজ ভাই এর মুক্তির ঘটনা। নিয়ে গেলাম জাগরণী পত্রিকা অফিসে । শুনলাম শ্রদ্ধেয় আবদুর রশীদ চৌধুরী ভারতে গেছেন পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যমোদীদের আমন্ত্রণে । তিনি না ফেরা পর্যন্ত সংবাদটি প্রকাশিত হবে না। মন্টা খারাপ হয়ে গেল । তিনি কবে দেশে আসবেন কেউ বলতে পারলো না। সংবাদটি বাসী হয়ে যাবে । কি করা যায় । তখন মনে পড়লো সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার কথা। কুষ্টিয়ার প্রাণকেন্দ্র মজমপুরে অফিস। সম্পাদক সর্বশ্রদ্ধেয় ওয়ালি উল বারী চৌধুরী । নামটা মনে আসতেই বুকটা দুরু দুরু কেপে উঠলো । শুনেছি উনি অত্যন্ত রাগী মানুষ । কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। ভয় করে না কাউকে। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নাকি বৃহস্পতিবার আসলেই আঁৎকে উঠতেন । না জানি কাকে তিনি ইস্পাত দিয়ে ধরাশায়ী করেন।
হুমড়ি খেয়ে মানুষ পড়তেন সাপ্তাহিক ইস্পাত। সেই পত্রিকায় আমার লেখা সংবাদ প্রকাশিত হবে এটা ভাবাও অবান্তর। তবে আমার জানা ছিল অবিসংবাদিত কম্যুনিষ্ট নেতা কমরেড আব্দুল হক কুষ্টিয়ায় আসলে জনাব ওয়ালি উল বারী চৌধুরীর শেল্টারে থাকতেন। সেই ভরসায় গেলাম সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকা অফিসে। সালাম দিতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন আগমনের হেতু । পকেট থেকে সংবাদ লেখা কাগজটি বের করে দিলাম। তিনি সংবাদটি পড়েই বল্লেন “গুড”। তোমার নামকি ? বাড়ী কোথায়? কি করো ? ভয়ে ভয়ে সব জবাব দিলাম। তিনি শান্ত স্বরে বল্লেন এর আগে কি কখনো নিউজ লিখেছো ? জবাব দিলাম না। তিনি বল্লেন তোমার লেখা নিউজটি কাল প্রকাশ হবে । ভালো লিখেছো । যদি মন চায় তুমি এখানে এসো সংবাদ দিও। তোমাদের মত ছেলেদের এ পেশায় আসা দরকার। এর পর তিনি বসতে বল্লেন । পরিচয় করিয়ে দিলেন তৎকালীন বার্তা সম্পদাক আব্দুর রাজ্জাক বিএ’র সাথে । মন্টা খুশিতে ভরে উঠলো।
শুরু হলো সাংবাদিতকতা পেশায় পথ চলা।
তার পর কত দিন কত রাত যে গুরুর সানিধ্যে থেকে সংবাদ লেখা চর্চা করেছি তার কোন ইয়োত্তা নেই। আমার দৃষ্টিতে তিনি এক লৌহ মানব। অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি কোন দিন। যে কারনে একজন জেলা প্রশাসকের ( মোহা: আবুল খায়ের ) বিরাগ ভাজন হয়েছিলেন তিনি । নোটীশ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পত্রিকাটি । কিন্তু বন্ধ রাখতে পারেননি প্রকাশনা। আইনি লড়ে তিনি প্রকাশনা যেমন অব্যাহত রেখেছিলেন তেমন সেই ডিসির বিরুদ্ধে মামলা করে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করিয়েছিলেন। ডিসি সাহেবের মৃত্যুর পর তার সন্তানরা জনাব ওয়ালি উল বারী চৌধুরীর কাছে এসে ক্ষমা প্রাথর্না করে মাফ পায়।
আজ কুষ্টিয়ায় অর্ধশত পত্রিকার সম্পাদক ও কয়েকশত সাংবাদিক হয় জনাব ওয়ালি উল বারী চৌধুরীর শিষ্য না হয় তাঁর ভাই আবদুর রশীদ চৌধুরীর শিষ্য। কুষ্টিয়াবাসীর জন্য চৌধুরী পরিবারের অবদান কম শেয়ার করুন