কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সংকটের মুখে থাকার কারণে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষ করে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে রোগীরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল, দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে একজন রোগী লাইনে থাকা অবস্থায় মারা যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কারণে তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
পান্টি ইউনিয়নের জোতভালুকা গ্রামের গৃহবধূ রোমেসা খাতুন তার শাশুড়ি হাফিজা খাতুনকে নিয়ে কুমারখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসেন। সকাল ৯টায় এসে তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় এবং যথাযথ সেবা না পাওয়ায় তার শাশুড়ি দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। এরপর জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, তিনি আর বেঁচে নেই। রোমেসা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, "বারবার কলাম, স্যার আমার রোগীটা দেখে দেন, তবুও দিলেন না। লাইনে দাঁড়িয়ে আমার শাশুড়ি মরে গেলেন।"
হাফিজার মৃত্যু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের এক করুণ উদাহরণ। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ৩৩টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২০টি পদই শূন্য রয়েছে। প্রতিদিন এখানে ৯০-১২০ জন রোগী ভর্তি থাকেন এবং বহির্বিভাগে ৪০০-৫১০ জন রোগী আসেন। জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সহায়ক কর্মী না থাকায় রোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। মঙ্গলবারও দেখা যায়, টিকিট কাউন্টার এবং চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। ১০১ ও ১১২ নম্বর কক্ষে তালা ঝুলছে, ১০৩ নম্বর কক্ষে চিকিৎসক নেই। বহির্বিভাগে যে কয়টি কক্ষ খোলা রয়েছে, সেখানে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে রোগী দেখা হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জেলা দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকায় স্বাস্থ্য সেবায় আরও ভোগান্তি দেখা দেয়।
এ অবস্থায় কুমারখালী পৌরসভার তরুণ মোড় এলাকার গৃহিণী রাজিয়া খাতুন জানান, প্রায় ১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট কাটতে পারেননি। ষাটোর্ধ্ব আব্দুল গফুর নামের এক রোগী কষ্টে টিকিট কাটতে পারলেও চিকিৎসক না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৯১ জন রোগীর মধ্যে শয্যা সংকটের কারণে বারান্দা ও মেঝেতে অবস্থান করছেন অনেকেই। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, সময়মতো ডাক্তার-নার্স আসেন না এবং রোগীদের সেবার বিষয়ে উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, "প্রচুর রোগীর চাপ থাকলেও জনবল অত্যন্ত কম। উপসহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে কোনোমতে কাজ চালানো হচ্ছে, যা যথেষ্ট নয়। জনবলের বিষয়ে বারবার সিভিল সার্জনকে বলা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান,হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনবলের বিষয়টি জেলার সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হবে।