: শামসুল আলম স্বপন :
অনেক দিন থেকেই কাঁচা শাক- সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্য ও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম ছিল চড়া । তার উপর কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারফিউ জারির পর প্রতিটি দ্রব্যের দাম এতটায় বেড়ে গেছে যে কারণে সাধারণ মানুষের অবস্থা এখন নাকাল।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বর্তমান বাজার চরম ঊর্ধ্বমুখী। সকল সবজি এখন বিক্রি হচ্ছে লাগামহীন দামে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) পৌরবাজারসহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম আকাশছোঁয়া। এছাড়া উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে মাছ,মাংস, চিনি, চাল, আটা ও ডাল। এ সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে ব্রয়লার,সোনালী,লেয়ার ও দেশী মুরগির দাম।
কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙা ৭০-৮০, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুর মুখী ৮০-১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
সবজির মধ্যে আলুর দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি । প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০-১১০ টাকা, বিভিন্ন জাতের বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মূলা ৪০-৫০ টাকা, পটল ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকা ও পেঁপে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
লাউ-কুমড়া আকার অনুযায়ী পিস ৪০ থেকে ৭০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ২০-৩০ টাকা, লাউ শাক ৩০-৪০ টাকা, মূলা শাক ২০-২৫ টাকা, পালং শাক ৫০-৬০ টাকা, কলমি শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। চাষের কই ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। আকার ভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি এবং চিংড়ি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শোল মাছ প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাবদা মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, টেংরা ৮০০, চাষের টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা, বাইম মাছ ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০ টাকা। এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে স্থানভেদে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের মতোই ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
খামারের মুরগির ডিম হালি (৪টি) বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকা । দেশী মুরগির ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় । হাঁসের ডিম হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় ।
কারফিউ জারির পর বাজারে সব ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। সরু বাসমতি চাল ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, মিনিকেট ৫টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা ।
মসলার বাজারে যেন আগুন লেগেছে, জিরা ১০০০ টাকা কেজি, লবঙ্গ ৮০০ টাকা কেজি, দারুচিনি ৫০০ টাকা কেজি. গোলমরিচ ৭০০ টাকা কেজি, সোয়াবিন তেল ১৭০টাকা কেজি, সরিষার তেল ১৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে ।
কারফিউয়ের আগে প্রতিকেজি ঝিঙা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। প্রতিকেজি করলা ৮০ টাকা বেড়ে আজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। ৫০ টাকা কেজির শসা ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ৫০ টাকা কেজি দরের চিচিঙ্গা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
কুষ্টিয়া হাউজিং বাজারে প্রায় ১০বছর ধরে সবজি বিক্রি করছেন আলম মিয়া। তার সঙ্গে কথা হলে আলম বলেন, আড়তে মাল নেই। কারফিউয়ের কারণে গ্রাম অঞ্চল থেকে সবজি আসতে না পারায় সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে পাইকারি বিক্রেতারা প্রতিটি সবজির পাল্লা (৫ কেজি) বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক ক্রেতাই দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার চাহিদার তুলনায় অল্প পরিমাণে সবজি কিনে বাসায় ফিরছেন।
মোশারফ হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সব জিনিসে যেন আগুন লেগেছে। সব মিলিয়ে মানুষ ভালো নেই। মানুষ যে একটু সবজি খাবে তার উপায়ও নেই। সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হোক, নাগালের মধ্যে আসুক, এটাই প্রত্যাশা।