logo

সময়: ০১:৩০, বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫ ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে কোনো মুহূর্তে তদন্ত প্রতিবেদন

Shadin Bangla
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২১ এপ্রিল, ২০২৫ | সময়ঃ ১০:১৪
photo
শেখ হাসিনাশেখ হাসিনা

অনলাইনডেক্স :

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। যে কোনো মুহূর্তে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে। এছাড়া আরেকটি মামলার তদন্তে শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।

 

রোববার শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ৮০০-৯০০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২০০টির মতো ঘটনার তদন্ত শেষের দিকে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০০ জনের বেশিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। শুনানি শেষে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ান ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। এদিন বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজকে ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলার শুনানি হয়। প্রথম মামলাটি ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের। এ মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জন আসামি রয়েছেন, যারা এই অপরাধের নির্দেশদাতা ছিলেন। এই মামলার ১৭ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। আমরা আজ আদালতে মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে একটি রিপোর্ট দিয়েছি এবং দুই মাসের সময় চেয়েছি। আদালত আমাদের দুই মাসের সময় দিয়েছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলার শুনানি হয়। জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সম্পৃক্ততার বিষয়ে যে মামলাটি রয়েছে সেটির বিষয়ে আমরা আদালতকে জানিয়েছি। আমাদের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে। তারপরও আমরা সত্যতার জন্য দুই মাসের সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম। আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তৃতীয় যে মামলাটির শুনানি হয় সেটি হলো গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ার নিয়ে। এই মামলাটি আমরা ১১ জনের বিরুদ্ধে শুরু করেছিলাম। মামলায় মাত্র একজন গ্রেফতার আছেন। তিনি হলেন সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান। শত শত গুমের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও আমরা আদালতের কাছে তিন মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত সেটিও মঞ্জুর করেছেন। এ সময়ের মধ্যে গুমের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, ক্যামেরা কিংবা ড্রোন ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। তদন্তের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মোটামুটি এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এসব অপরাধ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে, সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মাধ্যমে হাসিনা তার মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তারা এই পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করেছে।

গুম-খুনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে মামলায় প্রতিবেদন জমার সময় বাড়ল : আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৪ জুন এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নাম প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। শেখ হাসিনা ও জিয়াউল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এই মামলার আসামি। এই মামলায় মাত্র একজন গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি জিয়াউল আহসান। তাকে রোববার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-২-এর কার্যালয় এবং কচুক্ষেতে গুম কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন এবং আলামত জব্দ করেছেন। কিছু কিছু আলামত ধ্বংস করারও চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তাজুল ইসলাম বলেন, ৮০০-৯০০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২০০টির মতো ঘটনার তদন্ত শেষের দিকে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০০ জনের বেশিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। গুমের কাজ গোপনে করা হতো উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, এজন্য তদন্ত করতে সময় লাগছে। এরপর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও দুই মাস বাড়ানোর আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনা, কাদেরসহ ৪৭ জনের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদনের সময় নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার সঙ্গে এ মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তাকে রোববার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৫ জন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলার বিষয়েও তদন্ত প্রতিবেদনের সময় বাড়িয়ে ২০ জুলাই করা হয়েছে। এই মামলার আসামিদের মধ্যে আজকে ১৭ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গত ১৭ অক্টোবর এই দুই মামলার প্রথম শুনানি হয়। সেখানে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ এই ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তারপরও শেখ হাসিনার মামলায় আরও একজনকে আসামি করা হয়। এ নিয়ে এই দুটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় তিনবার বাড়ানো হলো

  • নিউজ ভিউ 360