logo

সময়: ১১:৩৪, শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫ ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ : বিএনপি নেতা আসাদুল হত্যাকাণ্ড : ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামি নায়েব ও ওহিদ

Shadin Bangla
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১০ মার্চ, ২০২৫ | সময়ঃ ০১:২৫
photo
ফ্যসিষ্ট কামারুলের সাথে দুই আসামী

 

সেলিম আহমেদ, মিরপুর থেকে ফিরে :

সেদিন ৫ আগষ্ট। রাত ৯ টার কাছাকাছি। নিজ বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। হঠাৎ একদল সন্ত্রাসীর বাড়িতে প্রবেশ। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্মিলিত কন্ঠে অকথ্য গালিগালাজ। নিজেকে বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা। তাতেও কোন লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আসাদুল হক।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আসাদুল হক। গত বছরের ৫ আগষ্ট পূর্ব শত্রুতার জেরে একদল সন্ত্রাসীরা তার নিজ বসত বাড়িতে হামলা চালায়। সে সময় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে সন্ত্রাসীরা আসাদুলকে আটক করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরী কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় স্ত্রাসীরা। মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসাদুলকে পার্শ্ববর্তী ইবি থানার পাটিকাবাড়ি গ্রামের  ফাঁকা মাঠের মধ্যে পুকুরে ফেলে রেখে যায়। পরিবারের মানুষ জন ৩ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পরও তার কোন সন্ধান পায়নি। এরপর ৯ আগষ্ট দুপুরের দিকে পরিবারের কাছে সংবাদ আসে পাটিকাবাড়ি গ্রামস্থ জনৈক এ্যান্টনীর পুকুরে একটি পঁচা ও গলিত ভাসমান লাশ পড়ে আছে। পরবর্তীতে পরিবারের মানুষজন গিয়ে লাশ সনাক্ত করে। আইন প্রক্রিয়া শেষে পরদিন তার দাফন সম্পন্ন হয়।


১২ আগষ্ট নিহতের ছেলে সফিকুল আলী বাদী হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাম উল্লেখ পূর্বক ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আরো ৫/১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

সুত্রে জানা যায়, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া একই মামলার আরো ১ জন আসামিকে জনতা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ঐ একজনকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদেরকে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি ৫ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে অন্যতম প্রধান দুই আসামি নায়েব ও ওহিদ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

মামলার বাদী সফিকুল আলী প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার দিন তার বাবা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে এজাহারভুক্ত আসামিরা তাকে ধরে ফেলে। ঐ সময় হামলাকারীরা তার বাবা আসাদুলকে উপর্যপুরী কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তার বাবা নিস্তেজ হয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় আসামিরা। ৩ দিন পর পার্শ্ববর্তী থানার এক পুকুরের মধ্যে তার বাবার গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম নায়েব ও জিয়াউর রহমান ওহিদ। তাদের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডে আওয়ামিলীগ, জাসদ ও বিএনপির কয়েকজন নেতারা ছিলেন। নায়েব ও ওহিদ দুজনই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বাবাও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নায়েব ও ওহিদের সাথে রাজনীতি না করায় আমার বাবার প্রতি তাদের রাগ ছিল। ইতিপূর্বে তারা আমার বাবাকে হুমকি ধামকিও দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে নায়েব ও ওহিদ আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াতেন। আমার বাবা আওয়ামী লীগ নেতাদের তাঁবেদারি করা পছন্দ করতেন না বলেই আমার বাবার প্রতি তাদের এতো রাগ ছিল। আসামিরা শুধু মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আমাদের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুঃখের বিষয় নায়েব ও ওহিদ প্রকাশ্যে হাট বাজারে ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কেন বা কি কারণে পদক্ষেপ নিচ্ছে না সেটা আমরা জানি না। শুধু অনুরোধ করে বলতে চাই, আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। যত দ্রুত সম্ভব মামলার সকল আসামিদের আটক পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, একসময় নায়েব ও ওহিদ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়লে তারাও পল্টি মারে। আমবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী টুটুলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে জায়গা করে নেন তারা। এরপর থেকে তাদের দুজনকে স্থানীয়রা সকলেই আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিনতো। এরা দুজন বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতো। কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের সাথেও তাদের গভীর সখ্যতা ছিল। তার সাথেও বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে এরা অংশগ্রহণ করতো তারা। পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আবারো পল্টি মেরে বিএনপি হয়ে গেছে নায়েব ও ওহিদ। ওদের কাছে মানুষ হত্যা করাও কোন বিষয় না। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের সাথে নিয়ে বিএনপি নেতা আসাদুলকে হত্যা করেছে তারা। নব্য বিএনপি হওয়ায় তাদেরকে পুলিশও ধরছে না। উল্টো সব জায়গায় ঘোরাঘুরি করে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে তারা।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা প্রতিবেদক বলেন, ওহিদ ও নায়েব বিএনপি বা আওয়ামী লীগ নয় তারা সুবিধাবাদী। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তারা তখন সেই দলের হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তারা এখন বিএনপি সাজলেও তারা যাদেরকে নিয়ে ঘোরে এবং যাদের টাকায় ভাব নিয়ে চলে তারা সবাই আওয়ামী লীগ। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা সব করতে পারে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী টুটুলের আপন চাচা আশিক, আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন ভুট্টা। ইউনিয়ন কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ মেম্বার, প্রচার সম্পাদক আলাউদ্দিন আলা এখন তাদের ঘনিষ্ঠজন। এদেরকে নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে নায়েব ও ওহিদ। এছাড়া ঐ ৩ জন নায়েব ও ওহিদকে অর্থের যোগানও দিয়ে থাকেন। বিএনপি নেতা আসাদুল হত্যাকাণ্ডে নায়েব ও ওহিদের সাথে আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাকর্মীরাও ছিল। আসামিদের মধ্যে-আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন  ইউনিয়ন কৃষক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ, আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাসান আলী, আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক  তোফায়েল হোসেন ভুট্টা  আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল আলী মেম্বার  ইউনিয়ন যুবলীগের ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এনামুল হোসেন সহ তাদের সহযোগীরা ও জাসদের ২ নাং জাসদের সভাপতি শামীম হোসেনও একাধিক নেতার নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের সাথে নায়েব ও ওহিদের গভীর সম্পর্ক ছিল তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইউসুফ আলী আসামী নজরুল ইসলাম নায়েব ও জিয়াউর রহমান ওহিদ কাছ থেকে মোটা অকের টাকা খেয়ে আটক করছে না। এ ব্যাপারে সার্কেল এসপ ‘র বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

  • নিউজ ভিউ 1098