logo

সময়: ১২:৩৫, শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫ ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

মন্তব্য প্রতিবেদন : অধপতিত সমাজের নিকৃষ্ট চিত্র ফুল কালচার আর তেলবাজি!

Shadin Bangla
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৫ জুলাই, ২০২৪ | সময়ঃ ০৭:৩৭
photo
ফুল কালচার আর তেলবাজি!


॥ শামসুল আলম স্বপন ॥

বিএনপির শাসন আমল । এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব নজরুল ইসলাম কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়ে কুষ্টিয়া আসার প্রস্তুতি নিলেন। তাকে বরণ করার জন্য ২জন প্রথিতযশা সাংবাদিকও ফুলের ডালা নিয়ে প্রস্তুত হলেন। তিনি যে দিন বিকেলে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে আসলেন সে দিন বিকেলে আগ থেকে ওই ২ জন সাংবাদিক ফুলের ডালা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জনাব নজরুল ইসলামকে বরণ করার জন্য । ক্যামেরা ম্যান রেডি । গাড়ির দরজা খুলে মাটিতে পা দিতেই সালাম বিনিময়ে পর ফুলের ডালা ডিসি সাহেবের হাতে তুলে দিতে গেলেন। বেরসিক ডিসি সাহেব ফুল না নিয়ে প্রশ্ন করলেন “আপনারা কারা”? ফুলদাতারা নিজেদেরকে বড়মাপের সাংবাদিক পরিচয় দিলেন। তখন ডিসি সাহেব বললেন “সরকারি চাকরি পাওয়ার আগে আমিও তো সাংবাদিক ছিলাম ” ( দৈনিক জনপদ পত্রিকার সাব এডিটর ) কই আমি তো কখনো ডিসি,এসপি,সরকারি চাকরিজীবির বরণ করার জন্য ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেনি। আপনারা চা পান করে চলে যান, আর চাকরি করা কালে আমি যে ভুল বা অন্যায় করবো সে গুলো পত্রিকায় লিখে আমাকে দিবেন যাতে আমি সংশোধন হতে পারি আর কুষ্টিয়াবাসী নি:স্বার্থ সেবা করতে পারি। এখনো ডিসি, এসপি, সরকারি আমলা আছে। আছে ফুলবাজ ও তেলবাজ সাংবাদিক । নেই শুধু ডিসি নজরুল ইসলাম । ডিসি, এসপি, সরকারি আমলারা যদি জানতে পারতেন  তাদের দেয়া ফুলের ছবি কি ভাবে মাদকের ডেরায়, নকল প্রশাধনী, নকল বিড়ি,সিগারেট,ভেজাল খাদ্য সামগ্রী প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানসহ অপরাধীরদের কাছে বিক্রি হয় তা হলে তারা  কখনো ফুল নামের তেল মাখতেন  না।
অবশ্য তেলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বর্তমান যুগে সব মানুষই স্বীকার করে। তেল আবিস্কার ও তেল ব্যবহার করতে শেখার পর মানুষের তেলের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে বাড়ছে তেল-বন্দনা। যুগে যুগে তেল নিয়ে তেলেসমাতি কান্ডও কম হয়নি। তেল নিয়ে কী সাংঘাতিক ঘটনা হতে পারে, তা আমরা দেখেছি মধ্যপ্রাচ্যে। স্রেফ তেলের দখল নেওয়ার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকা ইরাকসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য তছনছ করে দিয়েছে।


বর্তমান জামানায় তেল ছাড়া সবকিছু অচল। তেল আছে তো সব আছে, তেল নেই তো কিছু নেই। তেল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ভাজি-ভর্তা-ঝোল, জ্বালা-জ্বলা-উত্তাপ আর উন্নতি-অগ্রগতি-পদোন্নতি সবকিছু নির্ভর করে তেলের ওপর। তেল ছাড়া বাতি জ্বলে না, গাড়ি চলে না, বিমান ওড়ে না, উনুন জ্বলে না, জীবনও চলে না। তেল বেঁচে থাকবার অনিবার্য উপাদান, জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তেলচর্চা, তেলের ব্যবহার ও পর্যাপ্ত তেল সংস্থানের ওপর নির্ভর করে মানুষের সাফল্য। তেল আছে বলে জীবন আছে। তেল ফুরিয়ে গেলে জীবনপ্রদীপও নিভে যায়।

আর তাই সমাজে তেল মারা লোকের অভাব নেই। কে, কাকে কতটুকু তেল মেরে নিজের অবস্থা পাকাপোক্ত করবে, স্বার্থসিদ্ধি করবে, নেক নজরে আসবে, তা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো যাকে তেল মারা হয় অর্থাৎ্ তোষামোদ করা হয়, সেও এতে খুব খুশি হয়। এ ধরনের তেলপ্রেমীদের কারণেই একটা দেশ, একটা সমাজ, একটা সম্প্রদায়, একটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পথে। এটা নিয়ে কারো হুঁশ নেই।

বর্তমানে বাঙালি মানেই উচিত কথা বললে মুখ কালো আর তেল দিতে পারলে খুব ভালো। তেল মারা প্রসঙ্গে একজন তেলবিশারদ লেখক বলেছেন, ‘তিলে তেল হয়, কৈয়ের তেলে কৈ ভাজা, তেলা মাথায় তেল দেওয়া। এক তেল নিয়ে কম রঙ্গ হয়নি এই বঙ্গে। এখনো যে হচ্ছে না, তা নয়। হচ্ছে এবং আগের চেয়ে বেশিই হচ্ছে। তবে তেল এখন শুধু আর রঙ্গ নয়, এটি আমাদের দেহ ও সমাজের একটি অঙ্গ। সময়টাই এখন তেলের। চারদিকে শুধু তেল, তেল আর তেল। একটু ভালোভাবে তাকালেই দেখা যায় সবার গা থেকে এখন ঘাম নয়, ফোঁটায় ফোঁটায় তেল ঝরছে। আমরা সবাই এখন একেকটি তেলের বিশাল বিশাল ড্রাম। তেল মারতে মারতে একেক জনের গায়ের চামড়া তুলে ফেললেও আমরা ক্ষান্ত হই না। উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত খুঁজতে থাকি আর কাকে তেল মারা যায়। বর্তমানে তৈলবিদ্যা যে যত বেশি আয়ত্ব করতে পারি জীবনে সে ততটাই উন্নতি করি। আমরা বিশ্বাস করতে শিখি তেলহীন বিদ্যা ফুটো পয়সার মতোই অচল।

তেলখেকো বাজারি কুকুরের গায়ে যেমন লোম থাকে না, সর্বত্র এভাবে তেল মারামারির ফলে আমাদের সমাজ-সংসারও আজ লোমহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের বিচার-বুদ্ধিতে জট লেগেছে, মরিচা ধরেছে। তবে মরিচা সারাতেও কিন্তু তেল লাগে। এটা যে কোন তেল, তা আমরা জানি। কিন্তু এখানে আমরা তা মারি কি?

তেলবাজি আর ফুল কালচারের  কারণে  আজ অধপতিত হচ্ছে সমাজ । ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে অসহায় মানুষ । সাংবাদিক হিসেবে  এই  নিকৃষ্ট  কাজ বন্ধ করে প্রশাসনের অপকর্ম তুলে ধরা আমাদের উচিৎ কিনা পাঠকের কাছে প্রশ্ন রইল।
প্রতিবেদনটি লিখতে গিয়ে তৈলাক্ত বাঁশে বানরের উঠা নামার অংকটি মনে পড়ে গেল । ওই অংকটি আমি কখনো মেলাতে পারিনি। তেল মারুন আপত্তি নেই তবে দেখবেন বদহজম যেন না হয়।

  • নিউজ ভিউ 1656