: শামসুল আলম স্বপন :
মহানস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ৫৭০ খ্রিষ্টাদে আরবের মক্কানগরীর কোরাইশ বংসে প্রেরন করেন মানবতার শ্রেষ্ঠ সেবক,দোজাহানের মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে।
মানব কল্যাণই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত।
শৈশব থেকেই তিনি আমৃত্যু মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলেন। নিপীড়িত মানুষের দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আপনজন হিসেবে । তিনি সব সময় সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন মানবসেবায় ব্রতী হতে। ধর্ম-বর্ণ গোত্রের বাইরে গিয়ে নানা জনহিতকর কাজ করার মহান শিক্ষা তিনি প্রচার করেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন ।
‘হিলফুল ফুজুল’ গঠনের উদ্যোগ :
যুগ যুগ ধরে চলে আসা আরবের হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ ও অরাজকতা ও অমানবিকতা নিরসন করার লক্ষ্যে যখন জনকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠনের উদ্যোগ নেন রাসুল (সা.)। তখনো তিনি (রাসুল (সা.) নবুওত প্রাপ্ত হন নি। নবুয়তপ্রাপ্তির আগে থেকেই একজন নিঃস্বার্থ জনসেবক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন আরবে । ‘হিলফুল ফুজুল’ ছিল বিশ্বের প্রথম স্বেচ্ছাসেবী সংঠন ( এনজিও) ।
‘হিলফুল ফুজুল’ এর কর্মসূচি ছিল :
১. আরবের গোত্রসমুহের মধ্যকার বিবাদ মিমাংসা করে দেশ থেকে অশান্তি দূর করা।
২, নিঃস্ব-অসহায় মানুষের সাহায্য প্রদান করা।
৩. দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর শক্তিমানদের জুলুম-নিপীড়ন প্রতিহত করা ।
৪. বহিরাগতদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করা। (ইবনে হিশাম, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৪-১৪০)
নবুয়ত প্রপ্তির পর মহানবীর জনসেবা কার্যক্রম:
রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাবকালে আরবে কড়া সুদের প্রচলন ছিল। নৈরাজ্যমূলক অর্থব্যবস্থায় সমাজ পরিচালিত ছিল। ভারসাম্যপূর্ণ ও সুখী-সমৃদ্ধ একটি সমাজ বিনির্মাণে তিনি কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এ লক্ষ্যে
তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তা নিম্নরূপ :
১. কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করা। ২. বিত্তশালীদের সম্পদের জাকাত প্রদান। ৩. জাকাত ছাড়াও অতিরিক্ত দান-খয়রাতে উৎসাহ প্রদান।৩ . ধনীদের কর্জে হাসানা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ। ৪. বাইতুল মাল থেকে কর্জে হাসানা প্রদান। ৫. অসহায়, অক্ষম, এতিম ও মুসাফিরদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। ৬. সুদি কারবার নিষিদ্ধকরণ। ৭.জাকাত ছাড়াও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কর থেকে অভাবী জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকরণ। এই কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে ক্রমেই দারিদ্র্য বিমোচন হয়। এমনকি খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে জাকাত দেওয়ার মতো দরিদ্র লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, খন্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ২৬)
মানব কল্যাণে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহন :
গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাসুল (সা.) নানা উদ্যোগ নেন। যেমন
১.দুস্থ-অসহায়দের চিকিৎসাসেবা প্রদান ।
আর্ত-পীড়িত মানুষের সেবার প্রতি রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রোগীদের সেবা করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫৯)
সাহাবি বারাআ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাদের সাতটি বিষয়ে বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন। তার একটি হলো আমরা যেন রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫০)
অসুস্থ ব্যক্তি যে-ই হোক, রাসুল (সা.) তার সেবায় এগিয়ে যেতেন। ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম, আত্মীয়-অনাত্মীয়র পার্থক্য তিনি করতেন<