শামসুল আলম স্বপন, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় উজানগ্রাম ইউনিয়নে বিত্তিপাড়া থেকে উজানগ্রাম এক কিলোমিটার ব্যবধানে ২টি সেতু নির্মাণ করছে কুষ্টিয়া এলজিইডি। দুটি সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী । কত দিনে শেষ হবে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ তা বলতে পারছে সংশ্লিষ্ট কেউ । এ কারণে ওই এলাকার জনমনে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ । এলাকাবাসী বলছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অজ্ঞাত কারণে প্রায় ২ বছর বন্ধ রাখে নির্মাণ কাজ । এতে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা জামজামি সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে। বর্ষা মৌসুমে সীমাহীন ভোগান্তি হলেও এলজিইডি কর্র্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কে বিত্তিপাড়া বাজার থেকে ঝাউদিয়া বাজার যেতে সদর উপজেলার উজানগ্রাম এলাকায় গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের ওপর ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু তৈরির অনুমোদন দেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। একই বছরের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৭০ শতাংশ।
এদিকে ওই সেতু থেকে মাত্র এক কিলোমিটার পশ্চিমে একই সড়কে কুমার নদীর ওপর ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩রা নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতুটির কাজ ২০২২ সালের ৮ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এ সময়ে শেষ হয় মাত্র ৫০ ভাগ কাজ ।
দুটি সেতু নির্মাণ কাজ পায় এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে এই সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিত্তিপাড়া বাজার-ঝাউদিয়া বাজার এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় জনগন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উজানগ্রামে জিকে খালের মধ্যে একটি সেতুটি অর্ধ নির্মিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে । তৈরী করা হয়নি সেতুতে ওঠা এ্যাপরোচ সড়ক। সেতু নির্মাণ এলাকায় নেই কোনো সাইনবোর্ড । সেখানে ঠিকাদারের লোকজন কিম্বা এলজিইডি’র কোন দায়িত্বশীল লোক পাওয়া যায়নি। উজানগ্রাম এলাকার ভ্যানচালক রাসেল হোসেন বলেন, সেতুর কাজ শুরু করে আবার প্রায় ২ মাস ধরে বন্ধ রেখেছে। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ।
বিত্তিপাড়া সেতু থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে কুমার নদী। সেখানেও নদীর মধ্যে নির্মাণাধীন সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতুর কাজও বন্ধ ছিল অনেক দিন। তবে সেখানে নির্মাণ কাজের মালামাল দেখাশোনার কাজ করেন দুজন শ্রমিক। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিতে ও কথা বলতে রাজি হননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই সড়ক দিয়ে এক সময় বাস-ট্রাক চলতো। বর্তমানে সড়ক বেহাল। নদীর ওপর পরিত্যক্ত স্টিল ব্রীজ সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। পাশেই টাঙ্গানো আছে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড । এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাঝে মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে । সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি চরমে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার নুরুজ্জামান মিয়া সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, প্রথমে ‘কাজের গতি ভালোই ছিল। কিন্তু মাঝে ব্যাংকে একটু সমস্যা হওয়ার কারণে এবং আভ্যন্তরীন কিছু জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। আমি সত্য কথা বলতে পারছি না। সত্য বল্লে ওরা আমার বিল আটকিয়ে দেবে । আভ্যন্তরীন সমস্যার বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে না চাইলেও একটি সুত্র জানিয়েছে আওয়াীলীগের শাসনামলে কুষ্টিয়া -৩ আসনের সাবেক এমপি মাহাবুবউল আলম হানিফ তার চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন ।
চাঁদা আদায়ে সহযোগিতা করেন ফ্যাসিষ্ট আতার দোসর এই কাজের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) আজিজুল হক। এসও আজিজুল হক উপজেলা প্রকৌশলী আরিফউদ্দৌলার নামে এই কাজ থেকে ৫% ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই উপজেলা প্রকৌশলী আরিফউদ্দৌলাকে মি.ফাইভ পারসেন্ট নামে অভিহিত করেন।
এ ব্যাপারে এসও আজিজুল হকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন। উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলা ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি কি করেছেন তা আমি জানিনা । আমি জানি সেতু ২টি সম্পূর্ণ নির্মাণ না হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি হচ্ছে । আমি চেষ্টা করছি জনগণের চলাচলের জন্য সেতু ২টি দ্রুত নির্মাণ করার । সেতু ২টির কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন আগামী মে-জুনের মধ্যেই সেতু ২টি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবো।
কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নানা কারণে সেতু ২টির নির্মাণ কাজে ধীরগতি হয়েছে। ঠিকাদার কাজের মেয়াদ বাড়ানোর চিঠি দিয়ে সময় চেয়েছেন । আমি সেতু ২টির নির্মাণ কাজ দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি । এই কাজে কারো গাফেলতি থাকলে কিম্বা কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকলে প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গনি কলেজের প্রভাষক রাজ্জাক মাহমুদ রাজ বলেন,নির্মানাধীন দুটি সেতু এখন এলাকাবাসীর চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতু দুটির নর্মাণ কাজে মান সম্মত মালামাল ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে। সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়া ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান তিনি।
উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্কাস মন্ডল বলেন দুটি সেতুর কারণে মানুষের অবনর্নীয় কষ্ট হচ্ছে । এলজিইডির কর্মকর্তাদের বার বার অনুরোধ করেছি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার কিন্তু তারা কর্নপাত করেনি। আগামী মে মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ না হলে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আমি আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
প্রতিবেদনে সহযোগিতা করেন সাংবাদিক সেলিম মাহমুদ ,সম্পাদক,লালন টিভি-২৪ ও সাংবাদিক উজ্জল মাহমুদ ,বিত্তিপাড়া,কুষ্টিয়া ।