স্বাধীনবাংলা নিউজ :মিরপুর প্রতিনিধি: গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের দপ্তর প্রধানগণ, ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান, ব্যাংক কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, প্রেস ক্লাবের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার থানা অফিসার ইনচার্জ এর উস্থিতিতে মিটিং ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংকে আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে মিটিং বলে প্রচারণা করছে মিরপুরের স্বার্থন্বেষী একটি মহল। আবার সমালোচনা করার মানুষদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট পরিলক্ষিত করে জানা যায় যে সমস্ত ব্যক্তি ইউএনও কে সমালোচনা করছে তারা বিভিন্ন দলের পদধারি লোকজন। ধারণা করা হচ্ছে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে দীর্ঘ পাঁচ মাস কোন সমালোচনা না করে একটি সরকারি মিটিং এর ছবি কে ইস্যু হিসাবে নিয়ে ইউএনও এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সারা কুষ্টিয়ার জেলার ছয়টি উপজেলাতে একইভাবে মাসিক মিটিং—এ কমবেশি ইউপি চেয়ারম্যানগণের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও গতকাল কুমারখালী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কুমারখালীর চেয়ারম্যানদেরকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বিএনপির জামাতের নেতাকর্মী সহ বিভিন্ন সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এটা নিয়ে কোন সমালোচনা না হলেও মিরপুর নিয়ে যখন সমালোচনা হচ্ছে তখন এটা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যই হচ্ছে বলেই ধারনা করা যায়। এপ্রসঙ্গে মিরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদী বলেন, সারাদেশে সব উপজেলাতেই মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং—এ চেয়ারম্যানরা অংশগ্রহণ করে এবং দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে করেও আসছে। সমালোচনা করলে পাঁচ মাস আগে থেকেই করা উচিত ছিল। তিনি আরো বলেন, এখানে ইউএনও কে দোষ দিয়ে লাভ নেই, স্থানীয় সরকার যদি চেয়ারম্যানদের পদ বিলুপ্ত করে তবে এমনিতেই তাদের মিটিংয়ে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। মিরপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৫ ই আগষ্টের পর মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পদ বিলুপ্ত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একাধারে উপজেলা প্রশাসক, মেয়র পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধির সবগুলো পদ বিলুপ্ত হলেও এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মেম্বারদের পদ বিলুপ্ত হয়নি। ফলে এখনও যারা এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সাথে সমঝোতা করে টিকে আছেন তারা পূর্বের ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ এর মাসিক মিটিং এ উপস্থিত হন। কারণ পর পর তিনবার এই মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকলে তাদের সদস্য পদ বিলুপ্ত হয়। এই মিটিং সারা দেশেই হয় প্রতি মাসের ২য় বৃহস্পতিবার। উক্ত মিটিংয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সকল দপ্তর প্রধান, চেয়ারম্যানবৃন্দ, থানা অফিসার ইনচার্জ, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, প্রেসক্লাবের সভাপতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ উপস্থিত থাকেন। উক্ত মিটিংয়ে প্রত্যেকটি দপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদ থানাতে একমাস ব্যাপী তাদের কার্য্যক্রম এবং পরবর্তী মাসের তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। উক্ত প্রতিবেদনগুলো আবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ নিয়ে গিয়ে তুলে ধরেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বিগত আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর উপজেলা পরিষদ ও পৌর মেয়র কাউন্সিলরদের পদ বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রগণ উক্ত আইন শৃঙ্খলা মাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত না হলেও বিগত পাঁচ মাস নিয়মিতভাবেই ইউপি চেয়ারম্যানগন উপস্থিত থাকেন। উক্ত সভায় চেয়ারম্যানগন উপস্থিত হয়ে তাদের এলাকায় নিয়মিত ভাতা ভোগির সংখ্যা, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন, ইউনিয়ন জুড়ে চুরি ছিনতাই, ভাঙা রাস্তাঘাট এর তথ্যসহ ইউনিয়নের সার্বিক বিষয় উক্ত মাসিক সভায় উপস্থাপন করেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সর্বশেষ সারাদেশের ন্যায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মিরপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উক্ত মাসিক ও আইন শৃঙ্খলা সভা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানও বিগত পাঁচ মাসের ন্যায় উপস্থিত ছিলেন। উক্ত ঘটনাকে একটি স্বার্থন্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীলীগের সভা বলে প্রচার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভাব—মূর্তিকে খারাপ করার চেষ্টা করছে। এবিষয়ে মিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিবি করিমুন্নেছা এর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল তাদের অনৈতিক ও অযৌক্তিক দাবি দাওয়া পূরণ করতে ব্যার্থ হয়ে প্রশাসনের উপর চড়াও হয়েছে। তারা প্রশাসনকে বিতর্কিত এবং অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করে গেছে। সম্প্রতি উপজেলার মাসিক সমন্বয় মিটিং ও আইনশৃংখলা মিটিংকে কেন্দ্র করে একটি অনলাইন নিউজ প্রচণ্ড বিদ্বেষ মূলক নিউজ করেছে এবং এটিকে কেন্দ্র করে সোশাল মিডিয়ায় বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা একটা কমিটি আছে, যারা যারা সদস্য তারায় এ মিটিংয়ে আসেন। এটা প্রতিমাসেই হয়। ৫ আগস্টের আগেও হয়েছে, পরেও হচ্ছে। পুরো বাংলাদেশে একি রকম। এগুলো জানার পরও যারা মন্তব্য করছে তারা কেন করছে কি কারণে করছে জিজ্ঞেস করলে সদুত্তর দিতে পারেনি। এটা যারা করছে তারা গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি। এধরনের ঘটনা খুবই অনাকাংখিত। তিনি আরো জানান, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাত দিন পরিশ্রম করে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে নিজেদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবনকে বিসর্জন দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যায়। আর এক শ্রেনীর মানুষ তাদের একান্ত ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রশাসনকে দুর্বল করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এটা চলতে থাকলে মাঠ প্রশাসনের অফিসাররা ভালভাবে ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং পরিণতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন আশ্চার্যজনক ব্যাপার হচ্ছে যারা ইউএনও’র বিরুদ্ধে লিখছে তারা কিন্তু সমাজে যারা অন্যায় করছে, লুটপাট করছে চাঁদাবাজি করছে তাদেরকে চেনা সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেনা। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারদের এরা সহজ শিকার মনে করে এবং নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য বিভিন্নভাবে অফিসারদের অপমান অপদস্ত করার চেষ্টা করে। এটা চলতে থাকলে ভাল কিছু হবেনা। অপরাধের প্রতিরোধের জন্য সমাজের মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ না থাকলে এবং অপরাধের প্রতি ঘৃণাবোধ না থাকলে শুধু প্রশাসন ও পুলিসকে দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুরালে গিয়ে ফুল না দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কাছ থেকে তিনি বিএনপি জামায়াত এর লোক হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। সে সময়ও বিবি করিমুন্নেছা সরকারি নিয়ম উপেক্ষিত করেননি। যার কারণে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি বিএনপি জামাতের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।