মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন মমতাময়ী মা রজনী

নিউজ ডেস্ক | shadinbangla.news
আপডেট : ২২ জুলাই, ২০২৫
Shadin Bangla
রজনী

শামসুল আলম স্বপন,কুষ্টিয়া :

 

প্রতিদিনের মত গত সোমবার  রাজধানী উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়ে এস এম জুমজুমকে আনতে গিয়েছিলেন মা রজনী ইসলাম ( ৩৫) । পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী  জুমজুম ।

 

 তিনি মেয়ের ছুটির জন্য স্কুলের শ্রেণীকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিমান এসে শ্রেণীকক্ষের সামনে পড়ে,সন্তানকে রক্ষার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষের দিকে ছুটে যান তিনি, যদিও তখনই শিশুটি নিরাপদে স্কুল ভবনের বাইরে চলে গিয়েছিল।

 

তবে রজনী হয়তো ধারণা করেছিলেন, তার কন্যা শ্রেণিকক্ষে আটকে আছে। তাই আগুনের ভয়াবহ,তার মধ্যেও তিনি পিছপা হননি। কিন্তু স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করা হলেও মমতাময়ী মা রজণীর কোন সন্ধান পাচ্ছিলেন না  পরিবারের সদস্যরা।

 

পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) তার  শাড়ি দেখে মরদেহটি রজনীর বলে শনাক্ত করেন স্বামী জহুরুল ইসলাম। মরদেহ বুঝে পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

 

এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে এস এম রুবাই একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। মেয়ে জুমজুমের সঙ্গে আরেক ছেলে এস এম রোহানও মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তবে অসুস্থ থাকায় সে গতকাল স্কুল যায়নি।

 

, প্রতিবেশীরা জানান  দীঘর্দিন ধরে জহুরুল সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরিবারের কাছে রজনীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে মরদেহ নিয়ে দৌলতপুরের গ্রামের বাড়িতে রওনা হন তাঁরা। ভোরের দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে মরদেহটি নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর মরদেহটি দৌলতপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা।

 

 

দৌলতপুরে গ্রামের বাড়িতে মরদেহটি পৌঁছালে শোকাহত মানুষ রজনীকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রজনীর করুণ মৃত্যুতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি স্বজন ও গ্রামবাসী। মাকে হারিয়ে নির্বাক  তিন সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার  ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্বজনরা ।

 

রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি গতকাল ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম ছিলেন। স্কুলে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় রওনা দেন। এর মধ্যে পরিবারের সদস্যরা জুমজুমকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। কিন্তু রজনীর কোনো খোঁজ মিলছিল না এ কথা জানান । একপর্যায়ে এক আত্মীয় মুঠোফোনে জানান যে রজনীর মরদেহ সিএমএইচে আছে। তিনি দ্রুত সেখানে ছুটে যান। দূর থেকে শাড়ি দেখে চিনতে পারেন, মরদেহটি রজনীর।

 

জহুরুল আরো বলেন, ‘যতটুকু দেখেছি, তাতে রজনীর মাথার পেছনে আঘাত। শরীরের কোথাও পোড়া চিহ্ন নেই। ধারণা করছি, দুর্ঘটনার সময় বিমানের কোনো অংশ তাঁর মাথায় গিয়ে লেগেছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মেনে নেওয়া যায় না। আবার না মেনেও উপায় নেই।’

 

রজনীর দাফনে উপস্থিত ছিলেন শোকাহত গ্রামবাসী,আত্মীয় স্বজন ছাড়াও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী।  তিনি জানান ঘটনাটি মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক ।