কুষ্টিয়ায় আনসার ভিডিপি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ফাতৌসী বেগমের বিতর্কিত মন্তব্যে তোলপাড়

নিউজ ডেস্ক | shadinbangla.news
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
Shadin Bangla
ফাতৌসী

 
 
ক্ষমতার অপব্যবহার, পক্ষপাতিত্ব ও উসকানিমূলক বক্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছে ব্যাংকপাড়া
 
নিজস্ব প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ শাখায় কর্মরত আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ফাতৌসী বেগম (পরিচিতি নম্বর ৬৭) সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। গত ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি লেখেন— “যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না তারা ‘জারজ’। ”
 
এই বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং ব্যাংকপাড়ায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটিকে অশোভন, উসকানিমূলক ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
 
ফাতৌসী বেগম ১৯৯৭ সালের ২১ আগস্ট খুলনা জেলার ডুমুরিয়া শাখায় আনসার ভিডিপি ব্যাংকে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পর বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ার পোড়াদহ শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এটাই প্রথম নয়—পূর্বেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
 
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন (ডিসপাস নম্বর ১০৩/৩১), যা ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়া আরএম অফিস থেকে হেড অফিসের মানবসম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হয় (ডিসপাস নম্বর ১০৩/২০১)। কিন্তু অব্যাহতির আবেদন দেওয়ার পরেও তিনি এখনও একই পদে কর্মরত আছেন—যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
 
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ফাতৌসী বেগমের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ। বরিশাল জেলার বাসিন্দা ফাতৌসী বেগম বিবাহিত রাজবাড়ী জেলার মো. মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে, যিনি বর্তমানে কুষ্টিয়ার ফুলতলা শাখায় একই ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 
অভিযোগ রয়েছে, এই দম্পতি মিলে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে বদলি, ঋণ অনুমোদন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে থাকেন। সাধারণ ভিডিপি সদস্যদের ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় গড়িমসি করা হলেও ঘনিষ্ঠদের দ্রুত সুবিধা দেওয়া হয়। এমনকি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বদলির ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
 
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী খোকন উদ্দিন আনসার ভিডিপি ব্যাংকের হেড অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন,
“একজন সরকারি কর্মচারীর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী এই বক্তব্যের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত এবং সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
 
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন,
“ওনারা নিজেদের সুবিধামতো বদলি করেন, এটা ওপেন সিক্রেট। এতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
 
জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
 
এই ঘটনা কেবল একটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; বরং গোটা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে দিয়েছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড কতটা গ্রহণযোগ্য—তা নিয়ে সমাজে চলছে তীব্র বিতর্ক।
 
আনসার ভিডিপি মিরপুর পোড়াদহ শাখার  ব্যাংক  ম্যানেজার ফাতৌসী বেগমের সাথে মুঠোফোন কল দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেন নি।
 
 
এ বিষয়ে আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শফিকুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি বলেন, “আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি। অফিসে ফেরার পর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
 
 
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম ও উসকানিমূলক আচরণ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা জনগণের আস্থায় বড় ধাক্কা দেবে।