স্বাধীনবাংলা নিউজ :
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহের স্মরণে দোলপূর্ণিমা বা স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে আজ বিকেলে। এ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকলেও এবছর পবিত্র রমজানের কারণে একদিনে শুধুমাত্র আলোচনা সভা এবং বাউলদের আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ উৎসব। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা। তবে সাধুসঙ্গ চলবে প্রচলিত রীতি অনুসারে।
গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে ছেঁউরিয়ার আখড়াবাড়িতে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. তৌফিকুর রহমান। এসময় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রার্থ প্রতীম শীলসহ অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় লালন একাডেমির আয়োজনে দর্শনার্থীদের জন্য কোনো উৎসব না থাকলেও সাধুসঙ্গ চলবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী। জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা তিথিতে মরমী সাধক ফকির লালন শাহের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও সাড়ম্বরে উদযাপন হয়ে থাকে। তবে এ বছর দোল পূর্ণিমা পবিত্র রমজান মাসে হওয়ায় লালন স্মরণোৎসবে শুধুমাত্র আলোচনা সভা এবং বাউল আপ্যায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পবিত্র মাহে রমযানের পবিত্রতা ও যথাযথ ভাব-গাম্ভীয্য রক্ষার্থে এ বছর বাউলদের মাগরিবের পরে এবং রাতে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জানা গেছে, মরমি সাধক লালন শাহ তাঁর জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে রাতে কালীগঙ্গার ধারে সাধুসংঘে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় লালন শাহের তিরোধানের পরও প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষদিকে লালনের আখড়াবাড়িতে দোলপূর্ণিমা বা স্মরণোৎসব উদযাপন করা হয়। দেশ বিদেশ থেকে লাখো ভক্তবৃন্দ জড়ো হন আখড়াবাড়িতে। অষ্টপ্রহরে গুরুকার্যের মধ্যদিয়ে শুরু হবে সাধুসঙ্গ। এ দিকে দোল পূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষ্যে কয়েক দিন আগে থেকেই আখড়বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ভক্তবৃন্দ। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে লালনেন গান। দলে দলে বিভিক্ত বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করছেন তারা। দুপুরে সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় শহিদুল সাধু বলেন, সারাবছর এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। দোল উৎসব দেশ-বিদেশের বাউল ও সাধুরা আখড়াবাড়িতে আসে। মিলন মেলা বসে। একে অপরের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়। আখড়াবাড়ির ভারপ্রাপ্ত খাদেম মো. মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুরুকার্যের মাধ্যমে শুরু হবে সাধুসঙ্গ। এরপর রাখাল সেবা, মধ্যরাতে অধিবাস, শুক্রবার ভোররাতে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে বাউল ও ভক্তদের সাধুসঙ্গ। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাজার সংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগত বাউল সাধক, ভক্ত অনুরাগী এবং দর্শনার্থীদের সহযোগিতার জন্য গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।