শামসুল আলম স্বপন,কুষ্টিয়া :
যে বাড়িতে বসে নিজ দলের বিরোধীতাকারিদের নির্যাতনের ছকআটা হত, যে বাড়িতে বসে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা ও গুম-খুনের নীলনকশা করা হত,যে বাড়িতে বসে কুষ্টিয়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং চাকরি প্রার্থী ও ইউ/পি নির্বাচনে প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে করা হত প্রতারণা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের সেই বাড়িটি “অভিশপ্ত বাড়ি ” আখ্যা দিয়ে অগ্নি সংযোগ,হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা ।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাড়িটির সামনে আসে এবং মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে অবস্থিত তিনতলা বাড়িটি দ্বিতীয়বারের মত বুলডোজার ও এক্সকাভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এলাকাবাসী জানাই এই বাড়িটি দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ 'ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু' হিসেবে পরিচিত ছিল। ঘটনার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ হাজারো ক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিল।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। এরপর শেখ হাসিনা ভাষণ দেয়াকালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে পিটিআই রোডে হানিফ এমপির বাড়িতে ক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা বুল-ডোজার ও এক্সকাভেটর মেশিন নিয়ে আসে ।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, খুনি হাসনার ভাষণ ও আগামী ১৮ তারিখে আওয়ামীলীগ হরতাল ডাকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন স্বৈরাচারীরা রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে। তারা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই বাংলায় তাদের ঠাঁয় নেই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চলছে চলবেই। তিনি বলেন ফ্যাসিষ্টকে এ দেশের আর কোন ক্রমে জায়গা দেয়া হবে না। যারা ফ্যাসিষ্টকে পুনরবাসন করার চেষ্টা করছে তাদেরকেও এ ভাবে প্রতিহত করা হবে।
এর আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশত্যাগের খবরে গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক এমপি হানিফের বিলাসবহুল আলিশান বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
এই বাড়ি ছিল হানিফ ও তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার ধান্ধা আর কু-কর্মের আবাস স্থল । হানিফের দোসর সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি রবিউল ইসলাম, হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা ও হানিফের নানা অপকর্মের বিরোধীকারি কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা ও গুমের পরিকল্পনা করা হয় এই বাড়িতে বসেই । আজ পর্যন্ত সবুজের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ৫ আগষ্টের পর সবুজের ভাই আরিফুল ইসলাম সজীব বাদি হয়ে হানিফ, হাজি রবিউল ইসলাম,আতাসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করে সবুজ হত্যা ও গুমের মামলা করে।
এদিকে বিএনপি নেতা আলআমীন রানাসহ জেলার শতাধিক বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের নেতা কর্মীদের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। এ সব কারণেই কুষ্টিয়াবাসীর চরম ঘৃণা এই “অভিশপ্ত বাড়ি”র প্রতি।
হানিফের বাড়িতে আগুন দেয়া ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন,রাজনীবিদ হিসেবে এটা কারো কাম্য হতে পারে না। ক্ষমতায় থেকে এমন কোন কাজ করা উচিৎ নয় যাতে জনগণ ক্ষুদ্ধ হয়। ক্ষমতার হারানোর পর আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের অবস্থা দেখে আমাদের সকলকে শ্ক্ষিা নেয়া উচিৎ ।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্যই আমরা রাজনীতি করি । রাজনীতি মানে বিরোধীদের নির্যাতন নিপিড়ন করা নয়। আওয়ামীলীগের এই করুণ দশা আমাদের সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ক্ষমতায় থেকে যেন আমরা জনগণের স্বার্থ বিরোধী কোন কাজ না করি।
কুষ্টিয়াবারের আইনজীবি ও এডিশনাল পিপি এ্যাড. রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, হানিফের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার জন্য মুলত তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা দায়ি। এই বাড়িতে বসে আতা চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজিসহ বিরোধীদের উপর চালিয়েছে ষ্ট্রীম রোলার । তিনি বলেন আমি কুষ্টিয়া পৌর নির্বাচনে দুইবার আংশ নিয়েছিলাম কিন্তু আতা আমাকে নির্বাচন করতে দেয়নি। আমাকে ডেকে নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য যেমন চাপ দিয়েছিল তেমন আমার কর্মীদের হুমকি ধামকি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছিল। আমি আজ কুষ্টিয়া বার ভবনের হানিফের নাম ফলক নিজ হাতে ভেঙ্গেছি। এটা আমার ক্ষোভের বহির্:প্রকাশ।