কুষ্টিয়ায় ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের সাফল্য: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

নিউজ ডেস্ক | shadinbangla.news
আপডেট : ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫
Shadin Bangla
সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

 

উজ্জ্বল মাহমুদ, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাঁদপুর ইউনিয়নে ক্যাপসিকাম চাষ করে নজির গড়েছেন অন্তত ৩০ জন কৃষক। মাত্র এক সপ্তাহে ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করে তারা এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। কৃষকদের আশা, চলতি মৌসুমে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে।

চাঁদপুর ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন কৃষকরা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত সাত দিনে প্রায় ২ হাজার কেজি ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করে পাইকারি বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তারা। কৃষকদের প্রত্যাশা, আগামী দুই মাসে আরও ১৪ হাজার কেজি ক্যাপসিকাম উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য ২১-২২ লাখ টাকা।

চাঁদপুর ইউনিয়নে জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতির উদ্যোগে এই ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়। সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু ২০২৪ সালে দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করে সফল হন। তার দেখাদেখি এবার সমিতির আরও ৩০ জন সদস্য মিলে ১০ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল ‘ইন্দ্রা গোল্ড’ জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেন।

কৃষক লিখন আলী জানান, এই ফসলের চারা রোপণের ৬০ দিনের মাথায় ফল আসা শুরু হয়। শুক্রবার বিকেলে  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে বিষমুক্ত এই চাষাবাদে জমিতে সবুজ ক্যাপসিকাম ঝুলছে। কৃষকেরা দল বেঁধে ফল তোলা, পরিষ্কার, মাপা এবং প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যস্ত।

প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম চাষ করা কৃষক মুন্সী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, গাছে প্রচুর ফল দেখে তারা খুশি। বাজারে চাহিদা ও দামের কারণে মুনাফার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

এই চাষ দেখতে এসে নিয়ামতবাড়িয়ার কৃষক রাজ্জাক বিশ্বাস বলেন, লাভজনক দেখে আগামী বছর তিনি এক বিঘা জমিতে চাষের পরিকল্পনা করেছেন।

কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, বিষমুক্ত এবং রোগবালাই মুক্ত ফসল দেখে তিনি তিন বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের পরিকল্পনা করছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম জানান, যশোর টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উচ্চমূল্যের সবজি চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ কুমারখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি খাতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

 

 

কুষ্টিয়ায় তামাকের জমিতে বিষ প্রয়োগ, সর্বশান্ত চার কৃষক

উজ্জ্বল মাহমুদ, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার মিরপুরে শত্রুতা করে চারজন কৃষকের সাড়ে ১১ বিঘা তামাকের জমিতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ফসল পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। এতে চার কৃষক আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এ ঘটনা নিশ্চিত করে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিকারের আকুতি জানান।

ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শোলাবিল মাঠে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, “বিএটিবি কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে এবং বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে তামাক চাষ করেছি। চাষে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। দেনার দায়ে বাঁচার কোনো উপায় নেই। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।”

অন্য কৃষক আব্দুল হালিম জানান, “জেটিআই কোম্পানি ও বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, ঘাস মারা বিষ দিয়ে সব তামাক পুড়িয়ে দিয়েছে। কার কাছে অভিযোগ করব? তামাক কোম্পানিও আমাদের খোঁজ নেয়নি।”

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার দুই বিঘা তামাকের ক্ষেত সম্পূর্ণ শেষ। প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে চাষ করেছি। এখন সব শেষ। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা অসম্ভব।”

আজিজুল হক বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে লিজের জমিতে তামাক চাষ করেছি। এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হবে।”

মিরপুর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, “কৃষকরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকার শুশীল নাহরিকরা জানান,
"শত্রুতার কারণে কৃষকদের এমন ক্ষতি দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসন ও তামাক কোম্পানিগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।"