শামসুল আলম স্বপন,কুষ্টিয়া :
ছোট বেলা থেকেই আশরাফ ছিল অত্যন্ত দুরন্তু । স্বপ্ন ছিল লেখা পড়া শিখে ভালো চাকরি করার । কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এসএসসি’র গন্ডি পেরুতে পারেনি তিনি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ-হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামের মো: কফিল উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম আশরাফ বাবা-মা আর ৪ ভাই ১ বোনের সংসারের হাল ধরতেই রংমিস্ত্রি কাজ শিখে দৈনিন্দন আয় করে সংসার চালাতে থাকেন। স্বপ্ন দেখেন সুখের সংসার গড়ার । একযুগ আগে আশরাফ বিয়ে করেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চড়াইকোল গ্রামের আনিছুর রহমানের মেয়ে লাবনী আক্তার ইতিকে । সুখেই চলছিল তাদের সংসার । বিয়ের ২ বছর পর লাবনীর কোল জুড়ে আসে এক ছেলে নাম রাখা হয় ফাহিম । বিয়ের ৪ বছর পর জন্ম নেয় মেয়ে ফারিয়া । ফাহিম এবার ৫ম শ্রণীর ছাত্র। মেয়ে পড়ে প্লেতে। দুই সন্তানকে নিয়ে আশরাফ অনেক স্বপ্ন দেখতেন। নিজে লেখা পড়া শিখতে পারেননি। তাই ছেলে ও মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা দেয়ার অদম্য ইচ্ছা ছিল তার ও পরিবারের। কিন্তু একটি ঘাতক বুলেট ভেঙ্গে দিয়েছে তার পরিবারের সুখের স্বপ্ন ।
গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন আশরাফ ( ৩৬) । তার স্ত্রী লাবনী আক্তার ইতি বাদী হয়ে গত ২০ আগষ্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় ২৯ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় প্রধান আসামী করা হয় কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাবুবউল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাসহ ২৯জনকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ আশরাফ কাজ শেষে কুষ্টিয়া শহর থেকে বাড়ির ঊদ্দেশে রওয়ানা দেন। আনুমানিক দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের সময় কুষ্টিয়া থানা মোড়ে পৌছালে হানিফ ও আতার নির্দেশে এজাহার নামীয় আসামীরা হত্যার উদ্দেশে তাকে ধাওয়া করে । আশরাফ দৌড়ে বকচত্তর মোড়ে পৌছালে আসামী শামীম বিশ^াস ডালিম,মেহেদী হাসান বাবুল,রাজন তাদের হাতে থাকা পিস্তল ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে আশরাফের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি বিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত অবস্তায় আশরাফ রাস্তার উপর পড়ে গেলে অন্যান্য আসামীরা তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিদ্বারা এলোপাতাড়ি আঘাত করে তার নিথর দেহ ফেলে রেখে আসামীরা পালিয়ে যায় । এ অবস্থায় আশরাফকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে বাদী লাবনী আক্তার ইতির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, আমার স্বামীকে আসামীরা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। এখন আমি ২ সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি খুনিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। তিনি আরো জানান মামলা দায়েরের পর একজন পুলিশ আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল কিন্ত ু বর্তমান মামলার কি অবস্থা তা জানতে পারেনি। তিনি জানান তার স্বামীর মৃত্যুর পর বিজিবি ৫০ হাজার টাকা,বিএনপি ৫০ হাজার টাকা, জামায়াত ১,৯৯,৫০০ টাকা দান করেছে। সাংবাদিকরা দিয়েছে ২ বস্তা চাল । এ ছাড়া সরকারি কোন অনুদান আমি পায়নি। টাকা গুলো আমি আমার ও ২ সন্তানের নামে সোনালী ব্যাংকে জমা রেখেছি। আমি ২ সন্তান নিয়ে পৃথক বাড়িতে থাকি । ওদের বাবা বাড়িতে এসে হাতে দিতো মিষ্টি জড়িয়ে ধরতো বুকে । সন্তানরা এখনো পথ চেয়ে থাকে বাবা কখন ফিরবে সেই আশায়। কিন্তু আমার শ^শুরের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পায় না। আমার বাবা-মা আত্মীয় স্বজন আমার বাসায় আসলে শ^শুর দেবররা তাদের অকথ্য গালাগাল করে । বর্তমান আমি অনেক কষ্টে আছি।
নিহত আশরাফের মা মোছাঃ নাজমা খাতুন ও পিতা কফিল উদ্দিন দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, আমার আশরাফের বউ লাবনী আমাদের বিরুদ্ধে যা বলেছে তা সব মিথ্যা কথা। আমরা সস্তান হারিয়ে আজ দিশে হারা । ছেলে নিহত হওয়ার পর আমরা প্রায় ১০ হাজার টাকার বাজার করে দিয়েছে। তার বাড়িতে এখন আমাদের যেতে দেয় না। আমাদের দুই নাতীকেও লাবনী এখন দেখতে দেয় না । আমাদের সঙ্গেও কোন সম্পর্ক রাখে না। সে এখন উচ্ছৃখল জীবন যাপন করছে। আমাদের জানা মতে আশরাফ নিহত হওয়ার পর জামাত,বিএনপিসহ বিভিন্নসংস্থা আশরাফের বউ লাবনীকে ৭/৮ লাখ টাকা দিয়েছে। আমরা বলে ছিলাম টাকা গুলো ওর ছেলে মেয়ের নামে ব্যাংকে রাখতে। কিন্তু আমাদের কোন কথা শোনেনিা ওর বাবা যা বলে লাবনী তাই শোনে । ওর বাবা টাকা গুলো আত্মসাত করার জন্য আমাদরে সাথে যোগাযোগ রাখতে দেয় না । ওর বাবা খুব খারাপ লোক । আমরা শুনেছি ওই টাকার মধ্যে ৩ লাখ টাকা লাবনী ওর বাবার কথামত তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীরকে ব্যবসা করার জন্য দিয়েছে। । মামলার ব্যাপারেও আমাদেরকে সে কিছু জানায় না ।
মামলার ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি জানান এখনো তদন্ত শেষ হয়নি।
সুত্র: দৈনিক আমাদের সময় : প্রকাশকাল : ২৮/১২/২৪